"Forgiveness forgives the forgivable."

 "Forgiveness forgives the forgivable." 


ক্ষমা করতে পারা এক বিশাল বড় গুণ, হয়ত সব থেকে বড় গুণ।

কিন্তু আদতে কি সবাই ক্ষমা করতে পারে? আর পারলেও তা কতটা মন থেকে? 


সব পুরোনো ক্ষত এক দ্রুত ট্রেনের মতো মনের ভিতর পেরিয়ে গেলো, চোখের সামনে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠল। যে সমস্ত গল্পের পাতা এতকাল এতদিন বন্ধ ছিল, তার প্রত্যেকটা অক্ষর আবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে, পুড়ে যাওয়া সিগারেটের সামনের অংশটুকুর মতো। হয়ত সবার এমনি অনেক গল্প থাকে। কষ্টের নিরিখে সবার কাছে নিজের গল্পই সেরা। এতেও সবার মধ্যে এক অদ্ভূত প্রতিযোগিতা থাকে, কার গল্পে কষ্ট বেশি। তবে মনে হয় ,যে গল্পে চোখ ভিজে যায়, তা মনে না করাই ভালো।


এতদিন এ পাতাগুলো বন্ধই ছিল, চরিত্রগুলোও এখন আর দাগ কাটে না মনে, কেমন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে সব। বয়স বাড়তে বাড়তে গল্পের চরিত্র বেড়েছে, জানি আরো বয়স হলে এসব গল্প বই করে বের করা যাবে। জীবনের বৃত্ত বয়সের সাথে সাথেই বাড়তে থেকেছে। ভিড় বেড়েছে, শুধু মানুষের সংখ্যা কম। আবার সময় ফুরিয়েছে- নতুন গল্প, নতুন চরিত্র সব। 


এত ভিড়েও কেউ কাউকে সহজে কেন্দ্র করতে পারেনি। আসলে  একসঙ্গে থাকলেই তো ভালোবাসা হয় না। কিন্তু এ পৃথিবী ভালোবাসাময়,শুধু সবাই ভালোবাসতে পারেনা। এক টুকরো ঘর খুঁজতে খুঁজতে কতো মানুষ যে যাযাবর হয়ে যায়, তা খুঁজলে হদিশ মিলবেনা বোধহয়।  আবার ঘর যদি খুঁজেও পায়, তা আদতে আশ্রয় তো?


"একখানা ঘর কতখানিই বা আশ্রয় দেয় মানুষকে, যদি না ঘরের লোক আপন হয়।"


এ ঘর পাওয়ার থেকে হারানোর ভয় সবার অনেক বেশি থাকে। 

মানুষ তবু এ ঘরের খোঁজে পথে নামে, খুঁজতে থাকে। ব্যর্থ খোঁজে হাতে যা জোটে, তাকে কষ্ট বলা যায় কি? হয়তো যায়, জানি না। 

মানুষ কষ্টে অভ্যস্ত হয়ে যায়। নিবিড় বনের মাঝে মানুষের আনাগোনায় যেমন এক পথের রেখা তৈরি হয়ে যায়, কষ্ট পেতে পেতে মনেও তেমন এক অদৃশ্য রেখার দাগ হয়ে যায়। মানুষ আসে, আর শুধু ওই পথ দিয়েই চলতে থাকে। এ রেখা মিলিয়ে যায় না, শুধু আলাপে-পরিচয়ে বাড়তে থাকে। 


তবে এ রেখায় ভালোবাসাও কমেনা। কারণ মানুষ ক্ষমা করতে শেখে। ক্ষমা করতে পারে। যারা পারেনা, তারা ওই রেখাতে পথ হারিয়ে ফেলে, যারা পারে তারা পেরিয়ে এসে দেখে এ পাড়ে সুন্দর একখানা জগৎ, সুন্দর একখানা ঘর, যে ঘর সে এতকাল খুঁজেছিল। 


তাই হয়তো ভালোবাসা দরকার, কিন্তু ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে 'ক্ষমা করতে পারা' আরও বেশি দরকার। কেবল কষ্টের দাগে 'ভালোবাসা' তো আর অপরাধ হতে পারেনা, মানুষ তো 'ভুল করে ভালোবাসেনা, ভালোবেসে ভুল করে '। আর সেসব ভুল, ভুলে গিয়ে হয়তো ক্ষমা করতে পারা দরকার, যে ক্ষমা করতে পারেনা, সে ভালোবাসেনা। যে ক্ষমা চাইতে পারেনা সেও ভালোবাসে না। 

ভালোবাসা আসলে ঘরের এক নিচু দরজার মতো, মাথা নোয়াতেই হয়। আর যে ক্ষমা করতে পারে, সে বাড়ির ছাদের মতো, যতই নিচু হোক তবু মাথার উপরেই থাকে। 


ক্ষত, হিংসে, ক্ষোভ, সব আগলে শুধু মনের ওজন বাড়ে, মানুষ পথ হারিয়ে যায়, ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলে, জীবনের কাছেই সহজ হতে পারেনা আর। তাই হয়তো ভালোবেসে ক্ষমা করে দেওয়াই ভালো, এতে আবার মানুষ হারানোর ভয় থাকে, কিন্তু হারিয়ে যাবার পর আপসোস নয়। 

জানি না নিজে কতটুকু পেরেছি। 


সন্ধ্যে নেমেছে গোলাপবাগে,  আমিও যাযাবরই রয়ে গেলাম, রোজ বাড়ি ফিরলেও, এক টুকরো নিজের ঘর খুঁজে পাইনি এখনও।



                                                Easha Nandi

Comments

Popular posts from this blog

এমন ভেঙে চুরে ভালো কেউ বাসেনি

টুকরো প্রেমের গল্প